নাস্তিকতার সঙ্গা ওখন্ডন
‘নাস্তিকতা’ হল, স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। যারা স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে অর্থৎ সারা বিশ্বের একজন নিয়ন্ত্রক ও স্রষ্টা আছেন বলে বিশ্বাস করেন না, তাদেরকেই সাধারণত: নাস্তিক বা আরবীতে ‘মুলহিদ’ বলে।
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই হল আস্তিক তথা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। আর স্রষ্টার অস্তিত্বের বিষয়টি এতটাই সুস্পষ্ট যে, যে কোন সাধারণ ব্যাক্তিও তা জানে, অনুধাবন করে এবং সকল সৃষ্টির দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। একজন বিশ্ব নিয়ন্ত্রক ছাড়া কি এ বিশ্ব এমনি-এমনিতেই এতা শৃ্ঙ্খলিত হয়ে চলছে ? কোন স্রষ্টা ছাড়া এমনিতেই সবকিছু সুষ্টি হয়ে গেছে ? কখনই নয় ! এ সাধারন কথাগুলো জানার জন্য বড় বড় ডিগ্রীধারী হতে হয় না। সাধারন একজন ব্যক্তিও তা অনায়াসে বলে দিতে পারে যে , এমনি এমনি কিছু সৃষ্টি হতে পারে না, যদিও স্পল্প সংখ্যক মাথা মোটা নাস্তিক সম্প্রদায়ের মাথায় এগুলো ঢুকে না। পবিএ কোনআন পাকে ইরশাদ হয়েছে-
* আল্লাহ্ সমন্ধে কোন সন্দেহ আছে কি , যিনি আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ? ( সূরা ইব্রহীম: ১০ )
সেই মহান রাব্বুল আলামীনই এ মহা বিশ্বকে তাঁর ইচ্ছা ও ইরাদায় সুবিন্যস্ত ও সুনিপুনভাবে সৃষ্টি করেছেন।মানুষকেও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে-
* এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট বাধাঁ রক্তরূপে সৃষ্টি করি, এরপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিনত করি। অতঃপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি-পঞ্জরে, তারপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেক দেই গোশত দ্বারা। অবশেষে তাকে গড়ে তুলি এক নতুন রূপে।অতএব নিপুনতম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান। ( সূরা মু‘মিনুন: ১৪ )
* এতে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে যে, মানব সৃষ্টির মত আল্লাহ্‘র সমস্ত সৃষ্টিই সুবিন্যস্ত ও সুসজ্জিত। অদৃশ্য এক স্রষ্টার ইচ্ছাতেই এ সব কিছু অস্তিত্ব লাভ করেছে, এ মহাবিশ্ব আকস্মিক কোন দূর্ঘটনার ফসল নয়। এ দিকে ইঙ্গিত করেই অল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে ইরশাদ করেন-
* তারা কি স্রষ্টা ব্যতীতই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা ? না-কি তারা নিজেরা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে ? ( সূরা আত্ব-তূর: ৩৫,৩৬ )
* মূলতঃ এ মহা বিশ্বের অবশ্যই একজন স্রষ্টা আছেন। তিনি হলেন মহান রাব্বুল আলামীন। তিনি স্বঅস্তিত্বে সর্বদা বিরাজমান্ তাঁর অস্তিত্ব প্রশ্নাতীত। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর অসীম কুদরত সর্ম্পকে অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ أَن تَزُولَا ۚ وَلَئِن زَالَتَا إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِّن بَعْدِهِ ۚ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا –
* আল্লাহ্ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে সংরক্ষণ করেন, যেন এগুলো স্হানচ্যুত না হয়, এগুলো স্হানচ্যুত হলে তিনি ব্যতীত কে এগুলো সংরক্ষণ করবে ? তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। ( সূরা ফাতির: ৪১ )
যাই হোক, স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কি-না এ ব্যাপারে আমাদের প্রমাণ পেশ করার কথা নয়। এ দায় তাদের, যারা স্রষ্টা আছেন বলে অস্বীকার করে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতের জন্য প্রমাণ খোজার প্রয়োজন হয় না। আর এর চেয়ে বড় কথা হল, সব সৃষ্টিতেই স্রস্টার অস্তিত্বের বিষয়টি পরিস্কার হয়ে আছে।
তাই ছোট এ অংশটুকু মূলতঃ স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ কিংবা নাস্তিকতার খন্ডনে নয় বরং নাস্তিকদের প্রতি সতর্কতা, তাদের প্রতি ধর্মের দাওয়াত এবং মুসলমান ঘরের কিছু সন্তান- যারা এ সকল শয়তানী খপ্পরে পডে ঈমান বরবাদ করছে তাদেরকে তাদের ফিতরাত তথা স্বভাব ধর্মের বানী স্মরণ করিয়ে দেওয়া মাএ।
ফ্রন্সিস বেকনের একটি উক্তি হল- “ বিজ্ঞান সম্পর্কে অল্প জানলে মানুষ নাস্তিক হয়, আর বেশি জানলে হয় আস্তিক”। বিজ্ঞানই জ্ঞানের পরিপূর্ণতা নয়, জ্ঞানের হাজারও শাখা-প্রশাখার মধ্যে একটি অংশ মাত্র আর পরিপূর্ন জ্ঞানের ভান্ডর হল- ‘আল- কুরআন’ । তদুপরি পবিত্র কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ তথা ‘আল-কুরআনুল হাকীম’ বলা হয়। আর এই কুরআন মহান স্রষ্টা আল্লাহ্‘রই বাণী । স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ বা ধর্ম বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী নয় যে বিজ্ঞান দিয়েই তা প্রমাণ করতে হবে। বরং বিজ্ঞানই স্রষ্টা ও তাঁর প্রদত্ত ধর্মের মুখাপেক্ষী।
কিছু লোক আছে, যারা এ প্রশ্নটি করে খুবই তৃপ্তিবোধ করে এবং নিজেদের পান্ডিত্য জাহির করতে চায়, সবকিছু যদি একজন সৃষ্টি করেই থাকেন তবে স্রষ্টকে কে সৃষ্টি করেছেন ? এটা অত্যন্ত শিশু সুলভ ও বোকাটে প্রশ্ন মাত্র, যা আপনি হেসেই উড়িয়ে দিতে পারেন। এ প্রশ্নটা তারাই করবে যারা স্রষ্টার প্রকৃত পরিচয় ধেকে বেখবর । মূলত: আল্লাহ্ তিনিই, যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি বরং যিনি সব কিছুর স্রষ্টা ও মালিক। আর লক্ষ্য করে দেখবেন, স্রষ্টা নেই বলে বৈজ্ঞানিক কোন আবিষ্কার খোঁজে পাবেন না, পাবেন কিছু বিজ্ঞানীর মতামত মাএ । বাস্তবতা এমনটাই।
আর বিজ্ঞানীদের মাঝেও অনেক বিজ্ঞানী আছে যারা আস্তিক-স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। তাদের কথা কেন নাস্তিকদের মুখে আসে না ? বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানী বলতেই তাদের মুখে নাস্তিকদের নাম কেন ? এটাকে কি একগুঁয়েমিতা বলা যায় না ? এখন বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংকে মাথার মুকুট কবে রেখেছে, অথচ সেই স্টিফেন হকিংই যখন ১৯৯৫ সলের আগে আস্তিক ছিল, তখন েএ সকল নাস্তিকরাই তাকে গালাগাল দিত। তখন তিনি বিজ্ঞানী হওয়া সত্তেও তার মূল্য ছিল না তাদের কাছে। বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলি যখনই “বাইবেলে, কুরআন ও বিজ্ঞান” বইটি লিখে কুরআনের সত্যতা ফুটিয়ে তুললেন তখনই নাস্তিকরা তাকেও গালি দিতে শুরু করল। এধরনের অনেক নজীরই রয়েছে। ‘বিগ ব্যাং থিউরী’ যখন কুরআনের সাথে মিলে যায়, মানুষের জন্ম বিষয়ক বিজ্ঞানী গবেষণা যখন কুরআন-হাদীসের সাথে মিলে যায়, এরূপ হাজারো মিরাকল যখন কুরআনের সাথে- ধর্ম ইসলামের সাথে সর্ম্পূণ মিলে যায়, তখন তারা চুপ মেরে যায় এ সকল বিষয়ে। এগুলো আর সামনে আনে না বরং অন্য বিষয় নিয়ে পানি ঘোলা করতে চায়। ফেরাউনের ব্যপারে কুরআন শরীফের সূরা ইউনুসের ৯০নং আয়াতে এসেছে যে, সে পানিতে ডুবে মরেছিল। আল্লাহ্ পাক ফরমান-
অর্থাৎ- অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে, যাতে তোমার পরবতীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিশ্বয় বেশির ভাগ লোক আমার নিদর্শনাবলী থেকে অমনুযোগী । ( সূরা ইউনুস- ৯২)
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছে যে, এ মমিটি পানিতে ডুবে যাবার পর উদ্ধার করে লাশটাকে মমি করা হয়েছিল। দ্বীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থানে থেকেও অলৌকিকভাবে মমিটি এখনো আগের মত টিকে আছে। এতটাই অরক্ষিতভাবে শত শত বছর ধরে এ মমিটি আছে, যা কল্পনাতীত । অন্যান্য ক্ষেত্রে এরকম প্রতিকূল পরিবেশে মমি কখনই টিকতে পারেনা; যা কুরআনের সাথে হুবহু মিলে যায় এবং প্রমাণিত হয়, তা মহান স্রষ্টা আল্লাহ্’ রই বিধান। যা দেখে ৫৫ বছর বয়সে বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলি আরবী শিখলেন, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোও পড়লেন, এক আল্লাহকে বিশ্বাসী হলেন এবং অবশেষে কুরআনের সত্যতা প্রমাণে লিখলেন “ বাইবেল , কুরআন ও বিজ্ঞান” ।
প্রকৃত কথা তো এই যে, একটু গবেষণা করলেই দেখতে পাবেন, বিজ্ঞানের থিউরীগুলো প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে এবং বিজ্ঞানের অনেক থিউরীই ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। স্টিফেন হকিং সাহেব নিজেও বলেছেন, ‘ভুল আমি করতেই পারি’। বিজ্ঞানীদের ভুলের আনেক লম্বা ফিরিস্তি রয়েছে। শতবছর আগের বৈজ্ঞানিক গভেষণাগুলো আধুনিক বিজ্ঞান ভুল প্রমাণ করেছে। বিজ্ঞানীরা অভ্রান্ত কিছু নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে-
- বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন মহা বিশ্ব স্থিতীশীল নয়। যা পরে ভুল প্রমাণিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
- আবার তিনি বলেছেন ‘ব্ল্যাকহোল’ বলে কিছু নেই। অনুরূপ তার মত একজন বিশ্ববিখ্যাতা বিজ্ঞানীরই ২৩টির মত ভুলের উল্লেখ রয়েছে।
- বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ১৫০০ সালের দিকে পিসার হেলানো টাওয়ার থেকে ভারী বস্তু ও হালকা বস্তু নিচে ফেললে কোনটি আগে পরবে, এ ব্যাপারে হাতে নাতে যে প্রমাণ দিযেছিলেন , তা শত বছরেও ভুল প্রমাণিত হয়নি, যা এখন ভুল বলা হচ্ছে।
- বিজ্ঞানী নিউটন অংক কষে বের করে ফিলেছিলেন ২০৬০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে। ইত্যাদি , ইত্যাদি।
এখন থেকে শত বছর পূর্বে যারা বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন, যাদের তত্ত্ব তখন সবাই গ্রহন করেও নিয়েছিল অথচ বর্তমানে তা ভুল প্রমাণ করছে আধুনিক বিজ্ঞানীগণ।
Thanks visit this site.