১. দয়াময় আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় নবীকে সর্বগুণে গ্রহণ করতঃ তাঁর বাণীসমূহের উপর পূর্ণবিশ্বাস ও আমলই খাঁটি মু’মিন ও মুসলিম হওয়ার মাধ্যম।
২. পাঁচ ওয়াক্ত নামায, নির্ধারিত রোযা যথা সময়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ক্বায়েম করুন। সাবধান! বেনামাযির মুখে মৃত্যুর সময় সাধারণতঃ কালিমা নসিব হয় না।
৩. উপযুক্ত হলে হজ্জ, যাকাত আদায় করুন। অনাদায়ে যন্ত্রণাময়ী শাস্তির কবলে পড়তে হয়।
৪. দয়াল নবীজির সুন্নাতসমূহ পালন করুন। যথাসাধ্য মুস্তাহাবগুলো পালনের চেষ্টা করুন এবং সকল প্রকার নিষিদ্ধ বিষয় ও সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকে দূরে থাকুন।
৫. নির্দিষ্ট ইবাদতের অবসরে হালাল জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি যিক্রে মগ্নথাকুন এবং শয়নকালে ওযু করতঃ কমপক্ষে ১ বার দরূদ শরীফসহ কালিমা শরীফ অর্থাৎ لَاّاِاهاٰلاَلھللاُلوُا سرادماحم ِھللا ّاّلاھللصاا ااساِْاا “লা˜ ইলা-হাইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হি ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাই্হি ওয়া সাল্লাম” পড়ে নিন। ধ্যানে রাখবেন, আপনার সকল অবস্থা মহান রবের হিসাবের আওতায়।

৬. প্রতিদিন সামান্য হলেও কুরআন তিলাওয়াত করুন, যেন খতম হয়। তা আপনাকে ইহপারে সচেতনতা দান এবং পরপারে বিভিন্নভাবে সাহায্য করবেই।

৭. আপনার ত্বরীক্বাভুক্ত ভাইদেরকে নিয়ে প্রতিবেশীগণকে আহবান করে প্রত্যেক আরবী মাসের ১১ ও ১২ তারিখের ‘গিয়ারভী শরীফ’অথবা‘বারভী শরীফ’ অবশ্যই পালন করবেন এবং সম্ভব হলে প্রত্যেক সপ্তাহে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ‘হালকায়ে যিক্র’সহ মিলাদ ও দু‘আর ব্যবস্থা করবেন।
৮. বৎসরে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, শবে ক্বদর, শবে মি‘রাজ, শবে বরাআত, ঈদুল ফিত্র, ঈদুল আদ্বহা ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো এবং আশুরার গুরুত্বপূর্ণদিন- যাদের স্মরণে রেজভীয়া দরগাহ্ শরীফে “ওরছে আজীম” হয়ে থাকে এগুলো পালন করুন। এতে আপনার উভয় জাহান নেয়ামতপূর্ণ হবে।
৯. প্রিয় নবীকে মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততিসহ আপন জীবনের চেয়েও বেশী ভালবেসে চলুন। নবীর রঙ্গে রঙ্গীন হওয়ায়ই চিরমুক্তির একমাত্র ব্যবস্থা। হে সাধক আপনি অন্তরচক্ষু বিশিষ্ট কামিল পীরের সন্ধান করছেন? যদি পেয়ে যান আল্লাহ্’র কৃতজ্ঞতা (আল্হামদুল্লিাহ্)। তবে পীর হওয়ার জন্য অন্তরচক্ষু বিশিষ্ট হওয়া শর্ত নয়। শুনুন! অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও অন্তরচক্ষু বিশিষ্ট কোন পীরের কর্ম যদি পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ্’র বিপরীত হয়, তাহলে সে-ও শয়তান। প্রকৃত অর্থে সেই আপনার নাজাতের পথ প্রদর্শক বা পীর-মুর্শিদ, যার সকল ভালোবাসা ও সর্ববিষয়ে অনুসরণের কেন্দ্রস্থল নবী মুহাম্মার্দুরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
১০. মহান আল্লাহর বিধান পালন ও প্রতিষ্ঠায় অবিরাম চেষ্টা করুন যদিও তা মাতাপিতা ও নিজ সন্তানের বিরুদ্ধে যায়।
যেমনটি ছিল হযরত আবু উবায়দাহ্ ইব্নে র্জারাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-সহ হুযুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর সাহাবাগণের মাঝে।
১১. আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হবে এমন কাজ ব্যতীত সকল বিষয়ে মাতা-পিতার বাধ্য হওয়া ফরয। যে বাধ্যতা ও খেদমতের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন হযরত বায়েজীদ বুস্তামী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।
১২. আপনি ও আপনার পরিবার ধর্মীয় নীতিতে অটল থাকুন এবং সাথে আপনার সমাজকেও উদ্বুদ্ধ করুন এবং আত্মীয়তা স্থাপন করুন তাঁদের সাথে, যারা ধার্মিকতায় অবিচল।

১৩.আপনি আপনার পরিবারের সকলকে এবং সাধ্যমত অন্যান্যদেরকেও ধর্ম শিক্ষায় উৎসাহিত করুন। এ ফিত্নার যুগে বাতিলপন্থীদের ধর্মীয় আবরণযুক্ত কৌশলসমূহ ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন ব্যতীত বুঝা মুশকিল, তাই আপনার সন্তানকে সুন্নী মাদ্রাসায় পড়তে দিন।
১৪. সাবধান! যাদের মধ্যে নবীভক্তি নেই এবং আল্লাহ্-রাসূলকে সর্বগুণে মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের সাথে কোন রকম সম্পর্ক রাখবেন না। আর আপনার কোন মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ, কষ্ট ও সংকট নিরসনে এগিয়ে আসুন। মহান আল্লাহ আপনার দুঃখ কষ্ট ও সংকট নিরসনে সাহায্য করবেন।
১৫. আপনার পীর ভাই বা ত্বরীক্বতসূত্রে আবদ্ধ যারা, তাঁরা আপনার আপনজন এবং একই পথের যাত্রী। বর্ণ-গোত্র না দেখে আন্তরিকতা সৃষ্টি করুন। রবের তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সৃষ্টির প্রতি ভালবাসা ও দয়া প্রদর্শন করুন। আর নিজেকে সৃষ্টির নিকৃষ্ট জানবেন। যদি আপন হাল অনুপাতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন তাহলে আপনি প্রকৃত মুত্তাকী নন।
১৬.ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতের তাবেদারী এবং নারী ও পুরুষের পৃথক পৃথক পর্দা পালনে আন্তরিক যতœবান হউন। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ ও মূহুর্ত দয়াল নবীজির ত্বরীক্বায় রাখুন।
১৭. পর্দা বজায় রাখুন এবং গান-বাজনা হতে দূরে থাকুন, খবরদার বেপর্দা ও গান-বাজনা অন্তর মুর্দা করে দেয় এবং ধার্মিকতায় অনিহা সৃষ্টি হয়ে যায়।
১৮.মিথ্যা, গীবত, কুপ্রবৃত্তির চর্চা ও নেশায় মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায় এবং দুনিয়াতে ও কবরে আযাবের কারন হয়ে দাঁড়ায়।
১৯. দৃষ্টি ও গোপ্তাঙ্গ জোর প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ করুন, এ দু’টি যত বেশী সংরক্ষিত হবে, তত বেশী সাধনার পথ অতিক্রম করা সহজ হবে।
২০.সর্বদায় ওযু অবস্থায় থাকতে চেষ্টা করুন। সাবধান! লাওয়াতাত্ (সমকামিতা) ও যিনার (ব্যভিচার) অভ্যাসে মৃত্যুর সময় ধর্মহারা করে দেয়।
২১. সুদ, ঘুষ, খিয়ানত এবং আর্থিক দুর্নীতিতে বাহ্যিক উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও এর ফলাফল বিপদ আর দারিদ্রতা।
২২.দৃশ্য-অদৃশ্য সকল প্রকার পাপ হতে পবিত্রতা লাভ করতঃ পানি বা মাটি দিয়ে পূর্ণ পবিত্রতা লাভ করুন, তবেই ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ ও নিয়মিত সাধনা লাভ হবে।
২৩.নবীর ত্বরীকা তথা শরীয়তের প্রত্যেকটি হুকুম আপনার ইহ ও পরকালের মুক্তি ও উচ্চ মর্যাদা লাভের মাধ্যম।
২৪. সাবধান! মৃত্যুর পূর্বে সকল প্রকার ঋণ হতে, পাপ ও আমলের কাযা হতে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। আর ৭০ হাজার বার অথবা এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার করে কালিমা শরীফের খতম করুন। তা আপনার ও আপনার আপনজনের নিদানের সঙ্গী। ৩০০ বার করে সূরা ইখলাছ খতম করুন, তা আপনাকে ৫০ বৎসরের গুনাহ্ থেকে পবিত্রতা দান করবে এবং সাধনার পথে সহায়ক হবে।
২৫.আপনার আদর্শ ও চরিত্র যেন অন্যকে মহান আল্লাহ্ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। খবরদার! বাতিলপন্থী আলিমদের সোহ্বত, তাদের ওয়ায-নসিহত ও তাদের লিখিত বইপুস্তক পড়া হতে দূরে থাকুন। তাদের নসিহত ও পুস্তকাদী পাঠের মাধ্যমেই শয়তান আপনার ঈমান কেড়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে। মদীনা মুনাওয়্যারা’র সুঘ্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে সুন্নী-মস্লকে আ‘লা হযরতপন্থী উলামায়ে কিরামের সোহ্বত লাভ ও তাঁদের বইপুস্তক পাঠ করুন। বিশেষত, এ দরগাহ্ শরীফের উলামায়ে কিরাম ও খলীফাগণের সোহ্বত অবলম্বন করুন। মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের সন্তুষ্টির নিমিত্তে তাঁদের দীর্ঘ শ্রম ও ত্যাগের স্বাক্ষী আমি নিজেই। আর আপনার সন্তানকে সুন্নী মাদ্রাসায় পড়তে দিন। কারন, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরয। প্রত্যেক মাসে একবার হলেও এনসিহতগুলো পড়ে নিবেন; বিশেষত গিয়ারভী শরীফ বা এ ধরনের কোন মজলিসে পড়লে উপস্থিত সকলে শুনতে পাবে এবং এতে আপনার ও সকলের ঈমান ও আমল মজবুত হবে।

২৬.এ ফিতনার যুগে সর্বপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত অবস্থায় যথা নিয়মে ধর্মীয় হুকুমসমূহ পালন করাই শ্রেষ্ঠ কারামত। আমার সহচরবৃন্দ ও আমার পরবর্তী প্রজন্মের নিকট আরযÑ “দরগাহ্ শরীফে যেন ইল্মের চর্চা থাকে এবং সম্মানের সাথে আলিমগণের খেদমত করা হয়, কারণ আমি গোটা জগতের সুন্নী আলিম ও সুন্নী জনতার খাদিম।” আর যারা আমাকে মুহাব্বত করেন তাঁদের নিকট আরযÑ “এ মুহাব্বত সুন্নিয়াতের উন্নয়নে আমার মাদ্রাসার খিদমতের মধ্যে জড়িত রাখুন এবং আমার আওলাদবর্গের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন, যতক্ষণ তাঁরা সুন্নিয়াতের সীমানায় অবস্থান করবে। কারণ তাঁরাও আমার ন্যায় আপনাদের খাদিম।”
২৭. শুধু মহান রবের উদ্দেশ্যেই কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে সজ্জিত পীরের মাধ্যমে বায়‘আতে রাসূল গ্রহণ করে সাধনার পথ সহজ করুন। ক্ষণস্থায়ী উদ্দেশ্য নিয়ে শুধু পীরের সাক্ষাৎ লাভ হয়, কিন্তু রবের কুরবত (নিকটবর্তী হওয়া) থেকে দূরে সরে যায়। নবী যুগ হতে এ নীতি এখনো এ জন্য চলছে যে, সাধক যেন সাবধানে সঠিক পথ পাড়ি দেয়।
২৮.হে সাধক! আপনি বার বার তওবা করেও ভঙ্গ করেছেন! ক্সনরাশ হবেন না, আবার তওবা করুন। আশা আর চেষ্টার লাগাম ছেড়ে দিবেন না, আর শুকরিয়া আদায় করুন যে, মহান রব আপনাকে তওবা করার সুযোগ দিচ্ছেন।
২৯.সাবধান! তাক্বদীরের উপর সর্বদাই সন্তুষ্ট থাকবেন। আপনার ভাল-মন্দ প্রত্যেকটা হালকে নিয়ামত জানবেন। আপনার জন্য সাধনা করা কঠিন হয়ে গেছে বুঝি! তবুও চেষ্টা করুন, কষ্ট করুন, প্রার্থনা করুন। মনে রাখবেন, মালিকের বিধান বড়ই হেকমতপূর্ণ। যিনি তাক্বদীরের মালিক, তিনি আপনারও মালিক; যার অধীনে তাক্বদীর তাঁর অধীনে আপনিও।
৩০.হে মুসাফির! মানুষের মারাত্মক বিপদ আর কঠিনতর দুশমন হলো তার ‘নফ্স’। নফ্সে আম্মারার অনিষ্টের কারণে মানুষ গোমরাহী ও ক্ষতিগ্রস্থতার মধ্যে নিমজ্জিত হয়। ফলে ঈমানের আলো থেকে বঞ্চিত হয় এবং আল্লাহ্’র সান্নিধ্য লাভ থেকে দূরে সরে যায়। কারণ খাহেশাতে নফ্সানী বা কুপ্রবৃত্তি মানুষের দিলের শত্রæ এবং ধর্মেরও শত্রæ। এ নফ্স সর্বদায় আপন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকে। তাই ধার্মিকের যথাযথ ধর্ম পালনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এবং কঠিনতর করে তুলে ধর্মীয় কর্মসমূহ। আর পাপাচার তথা শরীয়ত নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ সহজ করে তুলে। তাই মানুষের জন্য কুফরীর ফিত্নার চেয়েও নফ্সের ফিত্না মারাত্মক ভয়ঙ্কর। মানব সৃষ্টির শুরু হতে এ পর্যন্ত যত ফিত্না-ফাসাদ ও ধ্বংসযজ্ঞ, নাফরমানী আর বিপদ মুসিবত সবই এ নফ্সের কারণেই। কিয়ামত পর্যন্ত এ সমস্ত ঘটনা নফ্সের জন্যেই সংঘটিত হবে। হে পথিক! যেহেতু চরম শত্রæ নিজ বগলেই বাস করে, তাই প্রত্যেকটি জ্ঞানী ব্যক্তির জন্যই ফরয তাকে সুকৌশলে পরাস্ত করা এবং তার হাত থেকে মুক্তির চেষ্টায় রত থাকা। আর তা এ মধ্যম পন্থায় যেÑ  নফ্সকে তার চাহিদা মত ভোগ-সম্ভার থেকে বিরত রাখুন। অর্থাৎ খাদ্য ও নিদ্রার পরিমাণ এতটুকু দিন যতটুকুতে নফ্সের উত্তেজনা শক্তি নিস্তেজ বা দমন হয়ে যায়। তবে নফ্সকে ধ্বংস করা যাবে না। কারণ তা সংশোধন করাই সাধকের উদ্দেশ্য। ‘সৃষ্টিতে শিখুন!’ চতুষ্পদ জন্তুযখন ঘাস-পানি থেকে বঞ্চিত থাকে, তখন দুর্বল হয়ে যায় এবং পশুত্ব-উত্তেজনাও বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর নফ্সের উপর শরীয়তের বিধানসমূহ যথাযথ ও মুহাব্বতের সাথে বাস্তবায়ন ঘটান, তবেই তা দূর্বল হয়ে যাবে। দেখুন! বোঝাইকৃত ঘোড়া বোঝা নিয়ে উত্তেজনাময় দুষ্টামি করার সুযোগ থাকে না। বরং বোঝা নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছার জন্যে ব্যস্ত থাকে।  তারপর মহান রবের দয়া প্রার্থনা করুন। মনে রাখবেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল সাধনার পূর্ণতা মাওলার দয়ার
উপর নির্ভরশীল। শুনুন! মহান আল্লাহ ও রাসূলের পরেই গর্ভধারিনী ‘মা’-ই হলেন দয়ার নিদর্শন। আর সেই ‘মা’ই কখনো কখনো সন্তানের কান্নাকাটির ফলে সন্তানের প্রয়োজন পূরণ করে থাকেন।
৩১.সেই তো অচেতন মানুষ যে মৃত্যুর সময় অজ্ঞাত হয়েও প্রস্তুতি নিচ্ছে না। হে সাধক! কুরআন পড়–ন, কুরআনেই আপনাকে খোঁজে নিন। আপনি ও আপনার পূর্বাপর ইতিহাস সেখানেই বিদ্যমান। হে পথিক! নিজেকে পূর্ণ ভাবলে উপদেশ আপনাকে উপকৃত করবে না। উপদেশ সত্য সন্ধানী ও বিনয়ী মানুষের জন্যে।

৩২.আপনার মৃত্যুর পূর্বেই জরুরী ওসিয়তসমূহ করে নিন এবং শরীয়তের জরুরী কর্মগুলোসহ তালকীন, যিক্র, কালিমা শরীফের খতম ও ছাওয়াব রেছানী, কুরআন তিলাওয়াত, আহাদনামা দান ও দাফনের উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ প্রভৃতি যেন নেক্কার সুন্নী আলিমে দ্বীনের মাধ্যমে সম্পন্নকরা হয়।
৩৩.হে আমার হিতাকাঙ্খীগণ! ‘আমার কবরের উপর বিশাল প্রাসাদ না করে এ দরগাহের মাদ্রাসা ও মস্জিদে সাধ্যমত ব্যয় করুন।’ এতে আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীবের সন্তুষ্টি অর্জন হবে এবং আমি খুশি হব। আর আমার সর্বস্তরের আপন জনের নিকট আরযÑ ‘আমার মৃত্যুর পর সাধ্যমত দান-সদকা করুন এবং বেশী বেশী কালিমা শরীফ খতম ও কুরআন শরীফ খতম করার আশা রাখছি এবং আমার লিখিত ‘পারের তরী’ ও ‘রেজভী তাহ্ক্বীক্বাত’ পুস্তক দু’টির ওসিয়তসমূহ বাস্তবায়নের আশা করছি। এতে আমল প্রত্যাশী ও আমলকারী উভয়েই মাওলার দয়ায় উপকৃত হবেন।
বিশেষ উপদেশমালা
 যে কোন কথা বা কর্ম ‘বিস্মিল্লাহ্’ বলে শুরু করুন।
 সময় করে ‘সূরা মুলক’, ‘সূরা ইয়াসীন’, ‘সূরা ওয়াকিয়াহ্’ ও ‘সূরা দুখান’ বেশী বেশী পড়তে চেষ্টা করুন; বিশেষতঃ
শোয়ার সময়।
 ‘তাহাজ্জুদ নামাযে’র অভ্যাস গড়ে তুলুন।
 ‘আওয়াবীন নামায’ পড়তে চেষ্টা করুন।
 যে কোন আমলের পূর্বাপর ‘দরূদ শরীফ’ পড়–ন। বিশেষতঃ শুক্রবার দিনে বেশী বেশী ‘দরূদে রেজভীয়া’ বা ‘দরূদে জুমু‘আ’ পড়–ন।
 আপনাকে কতটুকু প্রিয় নবীর রঙ্গে সাজালেন, আর কতটুকু বাকী? প্রতিদিন একবার হিসাব করুন।
 সকল বিপদ ও উদ্দেশ্য পূরনে “হ˙াস্বুনাল্লা-হু ওয়া নি‘মাল্ ওয়াকীল” বেশী বেশী পড়–ন। (বিস্তারিত পারের তরী দ্রষ্টব্য)
 সকল রোগের শিফা হিসেবে একবার ‘সূরা ফাতিহা’ পড়ে পানি পান করুন এবং ক্সদনন্দিন খাদ্য তালিকার সাথে পরিমিত কালোজিরা ও মধু সেবন করুন।
 আপনারা সাধ্যমত সুন্নী আলিম ক্সতরীতে সহায়তা করুন। তাওফিক মোতাবেক নিজ নিজ এলাকায় সুন্নী প্রতিষ্ঠান
গড়ে তুলুন। আর সম্ভব হলে রেজভীয়া দরগাহ্ শরীফের মাদ্রাসা, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানাদীতে সাধ্যমত আপনার সামান্য অংশ গ্রহণে দ্বীনের বড় খেদমত হয়ে যাবে।
 পীর-মুরীদীর ক্ষেত্রে ৫টি বিষয়ের প্রতি যতœবান হবেন: মুহাব্বত, আদব, ক্ষমা, দয়া ও নমনীয়তা। এগুলো আপনার রাস্তা দ্রæত অগ্রসর হওয়ার বাহন।
 হস্ত-পদ-জবান-ইশারায় মানুষকে কষ্ট দিবেন না। মানুষ আল্লাহ্’র রহস্য ও প্রেমের বাগান এবং সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের সাথে ভাল আচরণ ইবাদাতের অন্তর্ভূক্ত।
 হালাল রিযিক সন্ধান করুন। নেককাজসমূহ কবুল হওয়ার জন্য হালাল রুজি পূর্বশর্ত। ক্সবধ সম্পদ অর্জন করা ও আহার করা দু’টোই ইবাদাত।
 মৃত্যুর পূর্বে সকল প্রকার ঋণ হতে, পাপ হতে ও আমলের কাযা হতে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে ত্রæটি করবেন না।
 মওতের ফেরেশতা আসার পূর্বেই ওসিয়ত করবেন, যেন আপনার মৃত্যুর পর আপনাকে কবরে রাখার পূর্বে শরীয়তের অন্যান্য কর্মসমূহ সম্পন্ন হওয়ার পরÑ
 আপনার হাতে অথবা বুকে ‘আহাদ নামা শরীফ’ বা ‘কালিমা শরীফ’ বা ‘বিস্মিল্লার্হি রাহ্মানির রাহীম’ দেয়া হয় অথবা কাফনের কাপড়ে লিখে দেয়া হয়।
 সুন্নী আলেম দ্বারা যেন জানাযার নামায পড়ানো হয় এবং কবরস্থ হওয়ার পর আযান, যিক্র, কুরআন তিলাওয়াত প্রভৃতি নেক কাজের তালকীন দেয়া হয়।
ওহাবী, দেওবন্দী, মওদুদী, শিয়া তথা বাতিল আক্বীদার ৭২ দলের কোন গোরস্থানে কবর না দিয়ে বরং কোন সুন্নী নেক্কার বুযুর্গ ব্যক্তির গোরস্থানে বা কবরের পাশে দাফন করার জন্যে ওসিয়ত করবেন। অন্যথায় একাকী নিখুঁত স্থানে দাফন করার জন্যে ওসিয়ত করে যাবেন।