ইসলাম ও বর্তমান প্রচলিত অন্যান্য ধর্ম:

মানুষ আল্লাহ্ তা‘আলার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহ্ মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন স্বীয় প্রতিনিধিত্ব এবং তঁর বন্দেগী করার জন্য। যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন নবী রাসুলগণকে। তাঁরা প্রত্যেকেই মানুষদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন মহান রবের একত্ববাদকে মেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু সময়ে সময়ে মানুষ হিয়েছে পথভ্রষ্ট, স্রষ্টা প্রদত্ত দ্বীন ‘ইসলা ’কে ছেড়ে রচনা করেছে মনগড়া নানাহ ধর্ম। তন্মধ্যে বর্তমান প্রচলিত রয়েছে হিন্দু, ইহুদী, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ প্রভৃতিসহ হাজারো ধর্ম। সুতরাং এ মানুষের মধ্যে কেউ জন্ম গ্রহন করে খ্রিষ্টান ঘরে, কেউ হিন্দু, ইহুদী বা অন্যান্য ধর্মালম্বীদের ঘরে, আর কেউ মুসলিম ঘরে।যে যেই ঘরেই জন্ম গ্রহণ করুক না কেন তার স্বভাব ধর্ম ‘ইসলাম’ই। যেমন, হাদিস শরীফে এসেছে-

* প্রতিটি শিশুই স্বভাবজাত ধর্ম ( ইসলাম)‘র উপর জন্ম গ্রহন করে।( মুসনাদে  আহমাদ)

শিশুটি বড় হওয়ার পরেই যখন  তার মাঝে জ্ঞনের আলো ফুটে উঠে, তখন থেকে মাতা-পিতাসহ আশেপাশের প্রত্যেকেই তাদের নিজ ধর্মকে সত্য বলে জোর দাবী করে থাকে। আর তখন সে সন্তানটি সত্য ‍ধর্ম অন্বেষনের পথে পা বাড়ায়; তখন থেকেই সে যাচাই করতে থাকে, প্রকৃত সত্য ধর্ম কোনটি! আর এটাই প্রত্যেকের জন্য উচিত। আল্লাহ্ পরীক্ষা করার জন্যই তিনি তা করেন নি। বরং তিনি ইরশাদ করেছেন-

* তার জন্য কল্যান যা ভাল সে উপার্জন করেছে, আর তার জন্য ক্ষতি যা মন্দ সে উপার্জন করেছে। ( সূরা বাক্বারা: ২৮৬)  অতএব , উচিত হবে সেই ধর্মই অবলম্বন করা যা ইহ ও পরকালীন মুক্তি  দেবে এবং যে ধর্মের সত্যতা সর্ম্পকে স্বয়ং তাওরাত এবং ইনজীলও সাক্ষী দেয়। যেমন-

* ঐ সকল লোক, যারা আনুগত্য করে এ রাসুলের, যিনি পার্থিব পড়াশোনা ব্যতীতই অদৃশ্যের সংবাদদাতা, যার সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে লেখা দেখতে পায়। (সূরা আরাফ: ১৫৭)

অতএব, দেখুন এবং গভীরভাবে অনুধাবন করুন, যাতাই করুন, সত্য দ্বীন-ধর্ম কোনটি। আর যেটি সত্য সে ইসলামকে গ্রহন করুন। এবং অনুভব করুন এর শান্তির পরশ।

এ ব্যাপারে প্রথমদিকেই আপনি কয়েকটি বিষয়ে তুলনা ও যাচাই করে দেখতে পারেন। যেমন- ধর্মের নাম, স্রষ্টার ধারনা, ধর্ম গ্রন্থের অবস্থা, পার্থিব ও পারলৌকিক বা আত্নিক চিন্তাচেতনা প্রভৃতি। নিম্নে এগুলোর একটি তুলনামূলক আলোচলনা পেশ করা হল।

 ধর্মসমূহের নাম:

*একটু গভীর ভাবে অন্যান্য ধর্ম  গুলোর নামসমূহের প্রতি চিন্তা করুন এবং সাথে ‘ইসলাম’ নামটি সম্পর্কেও ভাবুন। এখানে একটি অদ্ভুত সত্য আপনার নিকট ফুটে উঠবে, দেখবেন সবগুলো ধর্মের নামই ব্যক্তি কেন্দ্রেীক, না হয় এলাকা কিংবা গোএ কেন্দ্রীক। অথবা এমন যে, তাদের ধর্ম গ্রন্থগুলোতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঐ সকল ধর্মের নাম নেই। কিংবা যাদেরকে ঐ সকল ধর্মগুলোর প্রবর্তক বলে দাবী করা হয়, তারা নিজেরা জীবিত থাকতে সে কথা জানতেনই না।

* উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, খ্রীষ্ট ধর্ম এসেছে তাদের প্রদত্ত নাম যীশু খ্রীষ্ট থেকে, বুদ্ধ ধর্ম এসেছে গৌতম বুদ্ধের নাম থেকে, কনফুননিজম এসেছে কনফুসিয়াসের নামানুসারে। জুডাইজম বা ইহুদী ধর্মের গোড়াপত্তন হয়েছে জুদা গোত্রের নামানুসারে। আর এদিকে হিন্দু বলা হয় যারা সিন্দু নদীর তীরে বাস করে তাদেকে। এটি কোন ধর্মের নাম হিসেবে আগে ব্যবহার হত না।

জওহর লাল নেহেরুর বই ‘ডিস্কভারি অব ইন্ডয়া’তে আছে, ‘হিন্দু’ শব্দটা প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছিল ৮ম শতাব্দীতে তান্ত্রিকদের বুঝানোর জন্য। ধর্মের সাথে এটি সম্পৃক্ত করা হয় অনেক পরে। এরুপ কোন ধর্মই দাবী করতে পারে না যে, সে ধর্মের নামটি স্রষ্টা প্রদত্ত। ‘খ্রিষ্টিয়ানিটি’  শব্দটা পুরো বাইবেলে (পরিবর্তিতে ইঞ্জিল) খুঁজে পাওয়া যায় না। ‘খ্রিষ্টিয়ান’ শব্দটা আসলেও ‘খ্রিষ্টিয়ানিটি’ শব্দটি নেই।খ্রীষ্টিয়ান টাইটেলটি দিয়েছিল যীশুর ( তাদের ভাষায় ) অনুসরনকারীদেরকে তাদের শত্রুরা।

* আর এদিকে ‘ইসলাম’ শব্দটির অর্থই ‘শান্তি’, ‘স্রষ্টার প্রতি নিজেকে সমর্পন করা’ প্রভৃতি। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় কিতাব আল-কুরআনের বিভিন্ন যায়গায় রয়েছে। যেমন- সূরা আলে ইমরান ১৯নং আয়াতে এসেছে,  অনেক হাদিস শরীফে এসেছে, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।এটি স্বয়ং স্রষ্টার মনোনীত ধর্ম, কোন গোত্র, স্থান বা ব্যক্তি নামে প্রতিষ্ঠিত নয়। যা থেকে খুব স্পষ্টভাবে ফুটে েউঠেছে ইসলামের সত্যতা।

স্রষ্টা ও ইবাদতের মালিক হিসাবে ধারনা:

* এই দিকেও একটু গভীর দৃষ্টি দিন, তাহলে দেখবেন- ইসলাম ছাড়া অন্যান্য সকল ধর্মই স্রষ্টাকে প্রত্যেকে নিজেদের মত করে কল্পনা করে নিয়েছে। মনগড়া চিন্তা চেতনায় নিজেদের  স্রষ্টাকে তারা নিজেরাই সৃষ্টি করে নিয়েছে। আহলে কিতাব সম্প্রদায় তারাও আল্লাহ্ প্রদত্ত ধর্মের মূল স্থান থেকে বহু দূরে সড়ে এসে ‍শিরকে লিপ্ত হেয়েছে।হিন্দু ধর্মে স্রষ্টা মানবাকৃতিতে পৃথিবীতে আসেন বলে বিশ্বাস করা হয়; একে তারা অবতারবাদ বলে। রাম, কৃষ্ণ অনুরুপভাবে মানুষকে তারা স্রষ্টার আসনে বসিয়ে দিয়েছে। কেউ সূর্য় পূজায় ব্যস্ত, কেউ চঁন্দ্র পূজায়। মাটি, পাথর বিভিন্ন কিছুর মূর্তি এমনকি তুলসিগাছ, আগুন প্রভৃতির পূজা করে চলছে। বুদ্ধরা গৌতমবুদ্ধের মূর্তীর পূজা করছে। খ্রিষ্টানরা তৃত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে গেছে।তারা ঈসা আলাইহিস্ সালামকে প্রভু, স্রষ্টা বা স্রষ্টার ছেলে মেনে করে। ইহুদীরা হযরাত উযারত নবীকে স্রষ্টা হিসাবে গ্রহন করছে। অনুরূপ আরো কত কি!

* ইসলাম কত নির্মল, কত সুন্দর এখানে স্রষ্টার ধারণা। ইসলামে বলা হয়েছে, মানুষের সৃষ্টি করা জিনিস স্রষ্টা বা প্রভু হতে পারে না। আর কোন সৃষ্টির ক্ষমতা কি ? স্রষ্টার অসীমতা আন্দাজ করতে পারে। সকল সৃষ্টির রক্ষক-নিয়ন্ত্রক িএকই সত্ত্বা। আর এই জন্যই তো সবকিছু চলছে  সুচারুরুপে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

* এক আল্লাহ্ ছাড়া আরও যদি কোন ইলাহ্ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। ( সূরা আম্বিয়া: ২২ )

* ইহুদী খ্রিষ্টানদের খন্ডনে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

* ইহুদীরা বলে, উয়াযর আল্লাহ্‘র পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলে, মসীহ্ আল্লাহ্‘র পুত্র; এসব কথা তারা নিজেদের মুখে কবাবকি করে। পূর্ববর্তী  কাফেরদের মত কথা রচনা করে। আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করুন। ওরা উল্টো দিকে কোথায় ফিরে য়াচ্ছে। ( সূরা তওবা: ৩০ )

অনুরূপ সূরা আন’আমের ৭৫ থেকে ৮০ নং আয়াতে ইব্রারাহীম আলাইহিস্ সালামের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক মূর্তী পূজা, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, রাত-দিন,প্রভৃতি পূজার খন্ডন করেছেন। বাস্তবিক চিন্তা করুন, যারা নিজদেরেই উপকার কিংবা অপকার করতে করতে পরে না, মানেুষের হাতে গড়া এই নকল মূর্তী কি করে অপরের কল্যান বা অকল্যান করবে ? আর চন্দ্র, সূর্য, রাত-দিন, এগুলোতো মহান স্রষ্টারই সৃষ্টি; এগুলো কি করে স্রষ্টা হবে ? এই সম্পর্কে কুরআন পাকে এসেছে-

*( আল্লাহ্ ) কোন নমুনা ব্যতিরেকেই আসমান ও যমীনের স্রষ্টা; তাঁর সন্তান হবে কোথা থেকে ? অথচ তাঁর কোন স্ত্রী নেই; এবং তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সবকিছু জানেন। ইনিই আল্লাহ্, তোমাদের পালনকারী এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা নেই, তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তাঁরই ইবাদত কর। তিনি সবকিছুর রক্ষক। চক্ষুসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না। এবং সমস্ত চক্ষু তাঁরই আয়ত্বে রয়েছে। আর তিনিই পরিপূর্ণ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত। ( সূরা আন‘আম: ১০২, ১০৩)

ধর্ম গ্রন্থসমূহের অবস্থা:

* অন্যান্য সকল ধর্মগ্রন্থগুলোর দিকে একটু সূক্ষ দৃষ্টি দিন, দেখতে পাবেন সবগুলোই মানব রচিত।তাওরাত ও ইনযীল যদিও আল্লাহ্ প্রদত্ত গ্রন্থ কিন্তু ইহুদী খ্রিষ্টানরা তা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এগুলোর মূল গ্রন্থগুলো আর অবশিষ্ট নেই। আর এগুলোর একটাও স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রন্থ নয় যে, এগুলোর অনুসরন করা যাবে। অপরদিকে নবীজির আগমনে পূর্বে নাযিলকৃত কিতাবসমূহের আমলও রহিত হয়ে গেছে।

* এদিকে একমাএ অপরিবর্তনীয় এবং স্রষ্টার বাণী-ই হল ইসলামের কিতাব ‘আল-কুরআন’ । যা সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে  যেমনটি নাযিল  হয়েছিল, তেমনে অবিকৃত রয়েছে, তা মানব সৃষ্ট বা রচিত কোন গ্রন্থ নয় বরং আল্লাহ্’র বাণী।সাড়া বিশ্বে কুরআন মুখস্তকারী  এত অধিক সংখ্যক লোক রয়েছে যা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ সমূহের ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না। যা এর সত্যতা ও অপরিবর্তনীয়তার উজ্জল প্রমাণ। যাতে পার্থিব, আত্নীক, পারলৌকিক, বৈজ্ঞানিক এমনকি অতিক্ষুদ্রতর বস্তুরও সাবলীল বর্ণনা রয়েছে। যা জ্ঞানীদের গবেষণার খোরাক। এ কিতাব সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন-

* এটি এমন এক কিতাব, যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। ( সূরা বাক্বারা ) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

* নিশ্চয় এ যিকর ( কুরআন ) আমি অবতীর্ণ  করেছি এবং এব সংরক্ষণকারীও আমি নিজেই । ( সূরা হিজর: ৯ )

জাগতিক ও আত্নিক বিষয়ের সমন্বয়:

* অন্যান্য ধর্মসমূহ মানুষকে হয় শুধু  পার্থিব বস্তুবাদের শিক্ষা দেয়, অধবা পুরোপুরি আত্নিক চিন্তাধারার দিকে নিয়ে যায়। কিছু ধর্ম আছে যারা শুধু মাত্র মাটির নিচের কথা বলে, কিছু শুধু আকাশের কথা বলে, কিছু আছে যারা শুধু বাহ্যিক পৃথিবীর সুখ সমৃদ্ধির কথা বলে। যেমন- মার্কসবাদও মানুষকে শুধু জাগতিক দিকে ঠেলে দেয়।আর কিছু আছে সংসার পরিত্যাগের শিক্ষা দেয়। আপনি একজন খাঁটি খিষ্টান কিংবা বৌদ্ধ হতে হলে সংসার ত্যাগী হতে হবে। অনুরূপ হিন্দু ধর্মও তাই শিক্ষা দেয়, এরূপ অন্যান্য সকল ধর্মের ক্ষেত্রেই একই কথা প্রজোয্য; কোনটাই পরিপূর্ণ নয়।

* এদিকে ইসলাম পার্থিব, আত্নিক, পারলৌকিক একই সাথে সবগুলোরই শিক্ষা দেয়। এখানে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের কথা এসেছে, অন্তরের প্রশান্তির দিক নির্দেশন দেয়া হয়েছে। পরিবার, সমাজ, রাষ্টের প্রতি আপনার দায়িত্বের কথা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আবার জাগতিক বিষয়ের মাঝ থেকে মহান রবের ইবাদত ও এক আত্নিক শান্তির বার্ত ও অনুভূতি রয়েছে ইসলামে।

* এছাড়া আপনি যত দিক দিয়েই  বিবেচনা করব্নে না কেন সবদিকেই অবশ্যই ইসলামের  সুমহান দিকই ফুটে উঠবে। তাই আসুন আমরা সত্য ধর্ম , স্রষ্টা প্রদত্ত জীবন বিধান  ইসলাম গ্রহন করি, ইসলামে খাঁটি ভাবে প্রবিষ্ট হই। নিজেকে স্থায়ী শান্তির উদ্যানের দিকে নিয়ে যাই।

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *