ঈমান

 

 

ইসলাম

 

 

ঈমান

 

 

ইসলাম

 

 

ঈমান, ইসলাম ও ইহ্সানের নামই দ্বীন:

 হাদিস শরীফে এসেছে-

ইসলামের  দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনুল্ খাত্তার রাদ্বিল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমরা একদিন রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম, এমন সময় ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিত এবং কুচকুচে কালো চুল বিশিষ্ট এক ব্যাক্তি আগমন করল। তাঁর মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না। এমনকি আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চেনেও না। এক পর্যয়ে সে নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট বসল, লোকটি স্বীয় হাঁটুদ্বয় রাসূল কারীমের হাটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে দিল এবং তাঁর দু‘হাত স্বীয় উরুর উপর রাখল।

অতঃপর বলল, হে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমাকে ‘ইসলাম’ সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু ইলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘ইসলাম’ হলো- তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্’র রাসুল, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাদান মাসে রোযা রাখবে এবং যদি তোমার সামর্থ্য থাকে তবে আল্লহ্’র ঘরে হজ্জ করবে। প্রশ্নকারী রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উত্তর শুনে বলল, আপনি সত্যই বলেছেন। বর্ণনাকারী হযরত উমর ইবনুল্ খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা খুবই আশ্বার্যাণ্বিত হলাম যে, ব্যক্তিটি নিজেই জিজ্ঞাসা করছে আবার নিজেই সত্যায়নও করছে।

অতপর লোকটি বলল, আমাকে ‘ঈমান’ সম্পর্কে অবহিত করুন। উত্তরে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , ‘ঈমান’ হচ্ছে তুমি আল্লাহ্ , তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে এবং তাক্বদীরের ভালো-মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে । উত্তরে আগন্তুক বলল, আপনি সত্যই বলেছেন।

এরপর আগন্তুক লোকটি বলল, আমাকে ‘ইহ্সান’ সর্ম্পকে আবহিত করুন । উত্তরে রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু ইলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘ইহসান’ হল- তুমি আল্লাহ্‘র ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ, আর যদি তুমি তাঁকে ‍দেখতে না পাও তাহলে মনে করবে, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখেছেন।

এরপর লোকটি আবার বলল, আমাকে ক্বিয়ামত সর্ম্পকে অবহিত করুন। নবী পাক ‘আলিমে মা-কা-না ওয়া মা-ইয়াকুন’ উত্তরে ফরমালেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারী হতে যার নিকট প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি বেশি অবগত নয়। প্রশ্নকারী বলল, তাহলে আপনি ক্বিয়ামতের নির্দেশনসমূহ বলে দিন । নবী পাক ইরশাদ করলেন, এর নির্দেশনসমূহ থেকে েএকটি হল, দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে । আর একটি হচ্ছে তুমি দেখবে যাদের পায়ে জুতা ও গায়ে কাপড় নেই, যারা শূন্য হাতে জীবন যাপন করে এবং মেষচালক তারাই পরবর্তীতে বড় বড় প্রসাদ গড়ে তুলবে এবং  এসব কাজে তারা প্রতিযোগিতা করবে।

বর্ণনাকারী বলেন, এসব কথা বলার পর লোকটি চলে গেল এবং আমি কিছু সময় নিরবে অতিবাহিত করলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে ওমর ! এ প্রশ্নকারী কে, তা কি তুমি জান ? আমি বললাম , আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান , তিনি হলেন হযরত জিবরাইল আলাইহিস্ সালাম। তিনি ‘দ্বীন’ শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যেই তোমাদের নিকট এসেছেন। ( মুসলিম; মিশকাত, কিতাবুল ঈমান)

আলোচ্য হাদীস শরীফের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এখানে হযরত জিবরাই আলাইহিস্ সালাম এসেছেন মানুষকে ‘দ্বীন’ কি তা শিক্ষা দেয়ার জন্য। কাজই দ্বীনের পরিচয় প্রদানে তিনি তিনটি জিনিস নবী পাকের সাথে আলোচনা করেছেন। যথা: –

১. ইসলাম কি ?

২. ঈমান কি ?

৩. ইহ্সান কি ?

অর্থাৎ দ্বীন বলতে এ তিনটি জিনিসকেই বুঝায়। সুতরাং এ হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হল- ঈমান, ইসলাম ও ইহ্সানের নামই দ্বীন।

এছাড়া আলোচ্য হাদীস শরীফে আরো দুটি বিষয় ছিল –

১. ক্বিয়ামত  সর্ম্পকে ও

২. ক্বিয়ামতের আলামত সর্ম্পকে।

প্রথম কথাার জবাবে নবীজী ইরশাদ করেছেন যে,  এ ব্যাপারে আমার চেয়ে প্রশ্নকারী বেশি জানার কথা; যদিও সর্বদিক হতে নবী পাক জিবরাইল ফেরেশতা হতে শ্রেষ্ট এবং বেশি জ্ঞাত তথাপি এ জবাব প্রদানের নিম্নাক্তো রহস্য হতে পারে।

১. হে জিবরাইল ! তুমি এ কথা জান যে, ক্বিয়মত কখন সংঘটিত হবে তা বলা যাবে না, তারপরও এ ধরনের প্রশ্ন কেন করছ ?

২. ক্বিয়মত কখন সংঘটিত হবে এর সত্ত্বাগত জ্ঞান না তোমার আছে আর না আমার । তা সত্ত্বাগতভাবে একমাত্র আল্লাহই জানেন। আর আমি তো আল্লাহ্‘র দেওয়া ক্ষমতায় জানি। এর পরই জিবরাইল আমীন বললেন ঠিক আছে, তাহলে এটুকু বলে দিন যে, ক্বিয়ামতের নিদর্শনাবলী কি ?

৩. জিবরাইল আমিন নবীজীকে এ প্রশ্ন করার হিকমত হল, হে উম্মত ! এই বিষয়ে তোমরা তো দেখলে যে নবী পাক তা গোপন রাখতে চাচ্ছেন। কাজই তোমরা আর এ বিষয়ে বিরক্ত করবে না। সাথে সাথে এটাও উদ্দেশ্য যে , হে মানব মন্ডলী ! তোমরা ঈমান, ইসলাম ও ইহ্সানের তথা দ্বীনের উপর সম্পূর্ন  অবিচল থাক। ক্বিয়ামত কখন এসে যায় তোমাদের জানা নেই, এর নিদর্শনাবলীও তোমরা জানলে । অতএব , পরকালীন জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু কর।

উপরে ঈমান, ইসলাম ও ইহ্সানের সংজ্ঞা স্বয়ং নবীজীই বলে দিয়েছেন । সাধারনতঃ ইসলাম বলতে সম্পূর্ন দ্বীনকেই বুঝায়। অথাৎ আল্লাহ্‘র মনোনীত ধর্মের নামই ‘ইসলাম’ । কিন্তু যখন ‘ইসলাম’ শব্দটি ‘ঈমান’ এর সাথে ব্যবহার হয় তখন  ইসলামের অর্থ আমল  বুঝায়। আর ‘ইহ্সান’ বলতে ইবাদাতে একাগ্রতা তথা তাসাওউফ বা আধ্যাত্নিকতার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

1 Comment

  1. Kaosar Ahmed

    অনেক সুন্দর একটি সাইট।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *